
শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী মুক্তাগাছা জমিদার বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে সুবেহ বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর কৃপা অর্জন করে তৎকালীন রাজধানী মুর্শিদাবাদে রাজ দরবারে কাজ করার সুযোগ করে নেন।আর এই সুবাদেই শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য চৌধুরী অতি সহজে নাম মাত্র মূল্যে আলেপশাহী পরগণার বন্দোবস্ত পেয়ে যান। নবাব ঈশা খাঁর সময় ২২ টি পরগণা তাঁর নিজ অধিকারে ছিলো। তাঁর এই পরগণাগুলোর মধ্যে আলেপশাহী, মোমেনশাহী ও হোসেনশাহী অন্তর্ভুক্ত ছিলো। মুক্তাগাছা ছিলো আলেপশাহী পরগণার অন্তর্ভুক্ত। পরবর্তী সময়ে বাংলার রাজনৈতিক বিভিন্ন চড়াই-উতরাইয়ে বেশ কয়েকজন শাসক পরিবর্তন হয়। পরে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী নবাব আলিবর্দি খাঁর কাছ থেকে আবারও আলেপশাহী পরগণাটির জমিদারী তার নামে লিখিয়ে নেন।
রাজা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী কখনো এই জমিদারিতে না আসলেও তাঁর মৃত্যুর পরে ১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর চার পুত্র পৈতৃক নিবাস বগুড়া থেকে বিশা যোগে আয়মন নদী হয়ে এই বিনোদবাড়িতে আসেন। তখন এই পরগণার নাম ছিলো বিনোদবাড়ি।
নতুন ভূস্বামীদের আগমনে চতুর্দিকে সাড়া পড়ে গেলো, প্রজারা অনেকে অনেক উপঢৌকন নিয়ে এসে নতুন রাজাকে সম্মান জানাতে লাগলো। তখন এখানে বসবাসরত মুক্তারাম নামে একজন সুদক্ষ কর্মকার পিতলের একটি চমৎকার প্রদীপ রাখার ‘গাছা‘ উপহার দিয়ে রাজাকে খুব মুগ্ধ করে দিলো। প্রজার এই শিল্পনৈপুণ্য আর ভালোবাসা দেখে তিনি বিমোহিত হয়ে এই জনপদের নাম পাল্টে তাৎক্ষণিক নতুন নামকরণ করলেন মুক্তাগাছা। মুক্তারাম কর্মকারের মুক্তা আর তার দেয়া গাছা যুক্ত করে হলো মুক্তাগাছা। সেই থেকে আজ অবধি এই জনপদের নাম মুক্তাগাছা হয়ে আছে।
কালের বিবর্তনে বাংলাদেশের বহু জায়গার নাম এমনি করে পাল্টে গেছে। বহুকাল আগে হারিয়ে যাওয়া সেই বিনোদবাড়ি নামটিকে স্মৃতিতে ধরে রাখতেই মূলত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বিনোদবাড়ি আইডিয়াল কলেজ নামকরণ করা হয়েছে। যাতে করে অনুসন্ধিৎসু মানুষ বিনোদবাড়ি নামকরণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে ইতিহাসের স্ফটিক জলে ডুবে আড়াইশ বছরের পেছনের ঘটনাকে টেনে আনবে তাদের কৌতূহল মেটাবার জন্য।
বিনোদবাড়ি আইডিয়াল কলেজ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্থাপনার অনুমতি পায় ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে। মাত্র ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ২০১৯-২০২০ সেশনে এই প্রতিষ্ঠানটি পথচলা শুরু করে। ২০২১ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ৩ জন জিপিএ ৫ সহ শতভাগ পাশের সফলতা প্রথমেই কলেজটি অর্জন করতে সক্ষম হয়। বিনোদবাড়ি আইডিয়াল কলেজটি আলোর মুখ দেখতে অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের।
বিনোদবাড়ি আইডিয়াল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জনাব মোঃ হারুনুর রশীদ (মিহির হারুন)
প্রতিষ্ঠাতা সদস্যঃ
- জানাব মোঃ আশরাফুল আলম
- জনাব মোঃ আরিফুল ইসলাম
- জনাব ফয়সাল আহমেদ শাহীন
- জনাব মোহাম্মদ আল আমিন
- জনাব জোনায়েদ আহমেদ শান্ত
মুক্তাগাছার সনামধন্য প্রতিষ্ঠান শহীদস্মৃতি সরকারি কলেজ, মুক্তাগাছা মহাবিদ্যালয়, হাজী কাশেম আলী ডিগ্রি কলেজের পাশাপাশি আশাকরি বিনোদবাড়ি আইডিয়াল কলেজও একদিন আদর্শ একটি সুপরিচিত কলেজ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।